টাঙ্গাইল জেলা
টাঙ্গাইল জেলা : টাঙ্গাইল জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত যা ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এর জনসংখ্যা প্রায় ৩৬ লক্ষ এবং আয়তন ৩৪১৪.৩৯ বর্গ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল আয়তনের ভিত্তিতে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২য় সর্ববৃহৎ জেলা। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ অবধি টাঙ্গাইল ছিল অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা; ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। এটি একটি নদী বিধৌত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এই জেলা যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এবং এর মাঝ দিয়ে লৌহজং নদী প্রবাহমান।
নামকরণের ইতিহাস :
টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে রয়েছে বহুজনশ্রুতি ও নানা মতামত। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তাঁর মানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে। টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচু শব্দের পরিবর্তে ‘টান’শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে ‘টান’শব্দের প্রচলন আছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিত হয়েছে টাঙ্গাইলে।
ভৌগোলিক সীমানা :
টাংগাইল জেলা ঢাকা হতে প্রায় একশত কি মি দূরে অবস্থিত। এই জেলার পূর্বে রয়েছে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলা, পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ জেলা, উত্তরে জামালপুর জেলা, দক্ষিণে ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলা। এর আয়তন ৩৪১৪.৩৮ বর্গ কি.মি.।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহঃ
- টাঙ্গাইল সদর উপজেলা
- কালিহাতি উপজেলা
- গোপালপুর উপজেলা
- মির্জাপুর উপজেলা
- মধুপুর উপজেলা
- ভূঞাপুর উপজেলা
- নাগরপুর উপজেলা
- ঘাটাইল উপজেলা
- বাসাইল উপজেলা
- ধনবাড়ী উপজেলা
- দেলদুয়ার উপজেলা
- সখিপুর উপজেলা
মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১১০ টি
টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১২ টি। করটিয়া, ঘারিন্দা, গালা, পোড়াবাড়ী, সিলিমপুর, কাকুয়া, কাতুলী, মগড়া, মাহামুদনগর, হুগড়া, দাইন্যা এবং বাঘিল।
কালিহাতি উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৩ টি। কোকডহড়া, গোহালিয়াবাড়ী, দশকিয়া, দুর্গাপুর, নাগবাড়ী, নারান্দিয়া, পাইকড়া, পারখি, বল্লা, বাংড়া, বীরবাসিন্দা, সল্লা, সহদেবপুর।
ঘাটাইল উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১১ টি। দেউলাবাড়ী, ঘাটাইল, জামুরিয়া, দিগড়, দিঘলকান্দি, আনেহলা, দেওপাড়া, ধলাপাড়া, সন্ধানপুর, লোকেরপাড়া এবং রসুলপুর।
বাসাইল উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৬ টি। কাউলজানী, কাঞ্চনপুর, কাশিল, ফুলকী, বাসাইল এবং হাবলা।
গোপালপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৭ টি। হাদিরা, নগদাশিমলা, ঝাওয়াইল, হেমনগর, আলমনগর, মির্জাপুর এবং ধোপাকান্দি।
মির্জাপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১৪ টি। মহেড়া, ফতেপুর, জামুর্কী, বানাইল, আনাইতারা, ভাতগ্রাম, ওয়ার্শী, বহুরিয়া, গোড়াই, তরফপুর, আজগানা, বাঁশতৈল, লতিফপুর, ভাওড়া।
ভূঞাপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৬ টি। ফলদা, অর্জুনা, গাবসারা, গোবিন্দাসী, অলোয়া, নিকরাইল।
নাগরপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১২ টি। নাগরপুর, ভাররা, সহবতপুর, গয়হাটা, বেকড়া, সলিমাবাদ, ধুবরিয়া, ভাদ্রা, দপ্তিয়র, মামুদনগর, পাকুটিয়া এবং মোকনা।
মধুপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৬ টি। আলোকদিয়া, আরণখোলা, আউশনাড়া, গোলাবাড়ী, মির্জাবাড়ী, শোলাকুড়ি।
সখিপুর উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৮ টি। কাকড়াজান, কালমেঘা, কালিয়া, গজারিয়া, দাড়িয়াপুর, বহেড়াতৈল, যাদবপুর এবং হাতীবান্ধা ।
বাসাইল উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৮ টি। আটিয়া, ডুবাইল, ফাজিলহাটি, পাথরাইল, লাউহা্টী, দেলদুয়ার, দেউলী এবং এলাসিন।
ধনবাড়ী উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ৭ টি। বীরতারা, বানিয়াজান, পাইস্কা, ধোপাখালী, যদুনাথপুর, মুশুদ্দি এবং বলিভদ্র।
ঐতিহাসিক স্থানসমূহঃ
- ফালুচাঁদ চীশতি-এর মাজার - সখিপুর উপজেলা;
- আতিয়া মসজিদ
- মধুপুর জাতীয় উদ্যান
- যমুনা বহুমুখী সেতু
- আদম কাশ্মিরী-এর মাজার;
- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার
- পরীর দালান,
- খামারপাড়া মসজিদ ও মাজার,
- ঝরোকা,
- সাগরদীঘি,
- গুপ্তবৃন্ধাবন
- পাকুটিয়া আশ্রম,
- ভারতেশ্বরী হোমস
- মহেড়া জমিদারবাড়ি
- মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ
- পাকুল্লা মসজিদ,
- আরুহা-শালিনাপাড়া কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ,
- নাগরপুর জমিদারবাড়ি,
- পুন্ডরীকাক্ষ হাসপাতাল,
- উপেন্দ্র সরোব,
- গয়হাটার মঠ,
- তেবাড়িয়া জামে মসজিদ,
- পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি,
- এলেঙ্গা রিসোর্ট,
- যমুনা রিসোর্ট,
- কাদিমহামজানি মসজিদ
- ঐতিহ্যবাহী পোড়াবাড়ি,
- করটিয়া সা’দত কলেজ,
- কুমুদিনী সরকারি কলেজ,
- বিন্দুবাসিনী বিদ্যালয়,
- দোখলা ভিআইপ রেস্ট হাউস,
- পীরগাছা রাবারবাগান,
- ভূঞাপুরের নীলকুঠি,
- শিয়ালকোল বন্দর,
- ধনবাড়ী মসজিদ ও ধনবাড়ী নবাব প্যালেস
- নথখোলা স্মৃতিসৌধ
- বাসুলিয়া,
- রায়বাড়ী,
- কোকিলা পাবর স্মৃতিসৌধ
- মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :
- সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, (২৯ ডিসেম্বর, ১৮৬৩ -১৭ এপ্রিল, ১৯২৯) - ধনবাড়ীর নবাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা;
- আবদুল হামিদ খান ভাসানী, (ডিসেম্বর ১২, ১৮৮০-নভেম্বর ১৭, ১৯৭৬) - ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক;
- অমৃতলাল সরকার (১৮৮৯ - ৪ এপ্রিল, ১৯৭১) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব, বিপ্লবী অনুশীলন দলের সভ্য;
- প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, (১৮৯৪ - ২৯ মার্চ, ১৯৭৮) - শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী, রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক।
- দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা (নভেম্বর ১৫, ১৮৯৬ - মে ৭, ১৯৭১) বাংলাদেশের বিখ্যাত সমাজসেবক এবং দানবীর;
- বেগম ফজিলতুন্নেসা জোহা, (১৮৯৯ - ২১ অক্টোবর, ১৯৭৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলমান ছাত্রী ও ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
- সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী, (১৯১০ - ৩০ মে , ১৯৮১) বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব বাংলা) টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র।
- প্রতুল চন্দ্র সরকার, (২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩ - ৬ জানুয়ারি ১৯৭১) ভারতবর্ষের বিখ্যাত জাদুকর। তিনি অন্যতম একজন আন্তর্জাতিক জাদুকর ছিলেন যিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তার জাদু দেখিয়েছেন।
- শামসুল হক, (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৮ - ১৯৬৫) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ।
- আবু সাঈদ চৌধুরী, (জানুয়ারি ৩১, ১৯২১ - আগস্ট ১, ১৯৮৭) বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি।
- কানাইলাল নিয়োগী (১৯২৪ -১৯ মে ১৯৬১) ভারতের বরাক উপত্যাকায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে নিহত ব্যক্তি।
- প্রতিভা মুৎসুদ্দি (জন্মঃ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৩৫) বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ ও ভাষা সংগ্রামী। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি ২০০২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
- রফিক আজাদ, (জন্ম: ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪১) একজন বাংলাদেশী কবি, মুক্তিযোদ্ধা ও সম্পাদক।
- বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (জন্ম: ১৯৪৭) ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাঘা কাদের নামে পরিচিত ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনী গড়ে ওঠে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক।
- মামুনুর রশীদ, (২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৮) একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের পথিকৃত।
- মান্না, (১৯৬৪ - ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০০৮ বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ছিলেন।
- ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য - বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ,রিসার্চ ফেলো অব সিপিডি।
0 Comments