নড়াইল জেলা
জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি জেলা। ১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীন নড়াইল মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। নড়াইল শব্দটি স্থানীয় লোকমুখে নড়াল নামে উচ্চারিত হয়। ঐ সময় নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া থানার সমন্বয়ে এই মহাকুমা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ নড়াইল মহাকুমাকে জেলায় রুপান্তরিত করা হয় ।
নামকরণের ইতিহাস :
১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীন নড়াইল মহাকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। নড়াইল শব্দটি স্থানীয় লোকমুখে নড়াল নামে উচ্চারিত হয়। ঐ সময় নড়াইল সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া থানার সমন্বয়ে এই মহাকুমা গঠিত হয় । পরবর্তীতে আলফাডাঙ্গা থানা এবং অভয়নগর থানা এই মহাকুমা ভূক্ত হয়। ১৯৩৪ সালে প্রশাসনিক সীমানা পূর্নগঠনের সময় অভয়নগরের পেড়লী, বিছালী ও শেখহাটি এই তিনটি ইউনিয়নকে নড়াইল জেলা ভূক্ত করে অবশিষ্ট অভয়নগর যশোর জেলা ভূক্ত করা হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্থান সৃষ্টির সময় এই মহাকুমায় চারটি থানা ছিল ।[১] ১৯৬০ সালে আলফাডাঙ্গা থানা যশোর হতে ফরিদপুর জেলা ভূক্ত হয় । ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ নড়াইল মহাকুমাকে জেলায় রুপান্তরিত করা হয় । প্রথম জেলা প্রশসাক ছিলেন ম শাফায়াত আলী । ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ নড়াইল মহকুমার প্রশাসক জনাব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ, জনাব আব্দুল হাই এবং অন্যান্যদের সহযোগিতায় নড়াইল ট্রেজারীর তালা ভেঙ্গে অস্ত্র নিয়ে যশোর সেনানিবাস আক্রমণের মধ্যে দিয়ে এ জেলার মানুষের মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়। অগনিত মুক্তি যোদ্ধার রক্ত এবং অনেক অত্যাচারিত , লাঞ্চিত মা-বোনদের অশ্রু ও সংগ্রামের ফলে ১৯৭১ সনের ১০ ডিসেম্বর নড়াইল হানাদার মুক্ত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে নড়াইল জেলার বিশেষ অবদান রয়েছে। নড়াইল জেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুসিত জেলা। এ জেলা হতে প্রায় ২০০০ জন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে। দেশের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর একজন মরহুম ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ নড়াইলের কৃতি সন্তান। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শাহাদাৎ বরণকারীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক চিত্রা নদীর পাড়ে লঞ্চঘাটের পল্টুনের উপর ২৮০০ লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। কথিত আছে বাংলার সুবাদার আলিবর্দি খানের শাসন আমলে দেশের বিভিন্ন অংশে বর্গি ও পাঠান বিদ্রোহীরা নানা ধরনের উৎপীড়ন শুরু করে। আলিবর্দির মুঘল বাহিনী বর্গি ও পাঠানদের সম্পূর্ন শায়েস্তা করতে ব্যর্থ হন। এরপর বর্গি ও পাঠান দস্যুরা তাদের অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। সুবা বাংলার পশ্চিম ও উত্তর অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রাণভয়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় পালাতে থাকে। সেই সময় মদনগোপাল দত্ত নামে সুবাদারের এক কর্মচারী কিসমাত কুড়িগ্রামে সপরিবারে নৌকা যোগে উপস্থিত হন। সেখানে তিনি কচুড়ির শক্ত ধাপের উপর একজন ফকিরকে যোগাসনে উপবিষ্ট দেখতে পান। উক্ত ফকির দত্ত মশাইয়ের প্রার্থনায় তার নড়িটি (লাঠি) দান করেন এবং এই নড়ি পরবর্তীতে আশীর্বাদ হয়ে দাড়ায়। মদনগোপাল দত্ত ফকির বা সাধক আউলিয়ার নড়ি বা লাঠি পেয়ে ধীরে ধীরে প্রতিপত্তি অর্জন করেন। এই ভাবে কিসমাত কুড়িগ্রাম অঞ্চলের ঐ স্থানের নাম হলো নড়াল। নড়ালের লেখ্য রূপ হলো নড়াইল। স্থানটি নড়িয়াল ফকিরের নড়ি থেকে পরিচিতি লাভ করে। মদনগোপাল দত্তের পৌত্র বিখ্যাত রূপরাম দ্ত্ত। রূপরাম দত্তই নড়াইলের জমিদারদের প্রথম পুরুষ। যা হোক, মদনগোপাল দত্ত ও তার উত্তরাধিকারীরা নড়িয়াল ফকিরের অতি শ্রদ্ধাবশত নড়াল নামটি স্থায়ী করেন। তারা কোনো পরিবর্তন আনেননি। নড়াইলে নীলবিদ্রোহের কারণে মহকুমা স্থাপনের প্রয়োজন হলে ১৮৬৩ সালে ইংরেজ সরকার মহিশখোলা মৌজায় মহকুমার প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন। এইভাবে মুঘল আমলের ’নড়াল’ নামটি ইংরেজ শাসনামলে নড়াইল নামে পরিচিতি পায়। কিসমাত কুড়িগ্রাম বা কুড়িগ্রাম নড়াইল বা নড়ালগ্রাম হতে প্রাচীন। কিসমাত কুড়িগ্রামে মুঘল শাসনামলের পূর্বে সুলতানি শাসনামলে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ও সেনাছাউনি ছিল। কিসমাত কুড়িগ্রামের আয়তন ও ছিল বেশ বিস্তৃত। [৩] গবেষক এস,এম রইস উদ্দীন আহমদ এর মতে লড়েআল হতে নড়াইল নামের উৎপত্তি হয়েছে। যারা শক্রর বিরদ্ধে নড়াই করে সহানীয় ভাষায় তাদের লড়ে বলে । হযরত খান জাহান আলীর সময়ে রাজ্যের সীমান্তে সীমান্ত প্রহরী নিয়োজিত ছিল। নড়াইল এলাকা নদী নালা খাল বিল বেষ্টিত । খাল কেটে রাজ্যের সীমান্তে পরীখা তৈরী করা হত। খাল বা পরীখার পাশে চওড়া উচু আইলের উপর দাড়িয়ে লড়ে বা রক্ষী সেনারা পাহারা দিত। এভাবে লড়েআল হতে লড়াল > নড়াইল নাম এর উৎপত্তি হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে । আরেকটি প্রচলিত মত হল নড়ানো থেকে নড়াইল নামের উৎপত্তি হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক স্থানের নামের সাথে ইল প্রত্যয় যুক্ত আছে যেমন টাঙ্গাইল, ঘাটাইল, বাসাইল, নান্দাইল ইত্যাদি। প্রত্যোকটি সহানের নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু কিংবদন্তী বা লোক কাহিনী প্রচলিত আছে। একটি বড় পাথর সরানোকে কেন্দ্র করে নড়াল বা নড়াইল নামের উৎপত্তি বলে কেউ কেউ মনে করেন ।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :
নড়াইল জেলায় 4 টি উপজেলা আছে; এগুলো হলোঃ
- কালিয়া
- নড়াইল সদর
- লোহাগড়া
- মনপুরা
ভৌগোলিক সীমানা :
নড়াইল জেলার পশ্চিমে যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা ও অভয়নগর উপজেলা , উত্তরে জেলার শালিখা উপজেলা ও মহম্মদপুর উপজেলা, পূর্বে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলা, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা এবং দক্ষিণে বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলা, খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলা , দিঘলিয়া উপজেলা ও ফুলতলা উপজেলা এবং যশোরের অভয়নগর উপজেলা। নড়াইলের ভূমি দক্ষিণ দিকে ঢালু। এ ভূ-প্রকৃতিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। উত্তর পশ্চিমের অপেক্ষাকৃত উচ্চভূমি, উত্তর ও পূর্ব অঞ্চলের মধুমতি নদী তীরবর্তী নিম্ন অঞ্চল এবং নবগঙ্গা নদী ও চিত্রা নদীর তীরবর্তী মধ্যম উচ্চতা বিশিষ্ট অঞ্চল।
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :
- চিত্রশিল্পী এস, এম সুলতান
- সৈয়দ আকবর আলী(১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,সমাজ সেবক)
- কমরেড অমল সেন
- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ
- রবি শংকর
- নিহার রজ্ঞন গুপ্ত
- কবিয়াল বিজয় সরকার
- সর্বকনিষ্ঠ শহীদ বুদ্ধীজীবি শেখ আব্দুস সালাম
- জারী সম্রাট মোসলেম উদ্দিন বয়াতী
- দানবীর ফাজেল আহমেদ মোল্যা
- মাশরাফী বিন মরতুজা
- কমল দাস গুপ্ত
- উদয় শংকর
0 Comments