সাতক্ষীরা জেলা
সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
নামকরণের ইতিহাস :
প্রাচীনকালে এই জেলাকে বাগড়ী, ব্যাঘ্রতট, সমতট, যশোর, চূড়ন প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হতো। অবশ্য এ জেলার নামকরণের পেছনে অনেক মত প্রচলিত আছে। প্রথম ও প্রধান মতটি হলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় নদীয়ার রাজা কৃষচন্দ্রের এক কর্মচারী বিষুরাম চক্রবর্তী নিলামে চূড়ন পরগনা ক্রয় করে তার অর্ন্তগত সাতঘরিয়া নামক গ্রামে বাড়ি তৈরী করেন। তার পূত্র প্রাণনাথ সাতঘরিয়া অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। ১৮৬১ সালে মহকুমা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর ইংরেজ শাসকরা তাদের পরিচিত সাতঘরিয়াতেই প্রধান কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ইতোমধ্যেই সাতঘরিয়া ইংরেজ রাজকর্মচারীদের মুখে ‘সাতক্ষীরা’ হয়ে যায়। দ্বিতীয় মতটি হলো একদা সাত মনীষী সাগর ভ্রমণে এসে একান্ত শখের বসে (মতানৈক্যে রান্নার উপকরণাদি না পেয়ে) ক্ষীর রান্না করে খেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ‘ক্ষীর’ এর সাথে ‘আ’ প্রত্যেয় যুক্ত হয়ে ‘ক্ষীরা’ হয় এবং লোকমুখে প্রচলিত হয়ে যায় সাতক্ষীরা।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ বনভূমি সুন্দরবন। বঙ্গোপসাগরের উপকূল এবং ভরতীয় সীমান্তে অবস্থিত সাতক্ষীরা নামক অঞ্চলটি মানব বসতি গড়ে ওঠার আগে ছিল একটি বিস্তীর্ণ জলাভূমি। পরবর্তীতে মানব বসতি গড়ে ওঠে। ১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীনে ৭টি থানা নিয়ে সাতক্ষীরা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৮৬৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার অধীনে এই মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৮৮২ সালে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে সাতক্ষীরা খুলনা জেলার অর্ন্তভূক্ত একটি মহকুমা হিসাবে স্থান লাভ করে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :
সাতক্ষীরা জেলার উপজেলা গুলো হলো:
- আশাশুনি উপজেলা
- কলারোয়া উপজেলা
- কালীগঞ্জ উপজেলা
- তালা উপজেলা
- দেবহাটা উপজেলা
- শ্যামনগর উপজেলা
- সাতক্ষীরা সদর উপজেলা
সাতক্ষীরা জেলার উত্তরে যশোর জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে খুলনা জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত। অবস্থানগত দিক দিয়ে সাতক্ষীরা জেলার অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে। উচ্চতার দিকে বিবেচনা করলে এ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১৬ ফুট উচুঁতে। জেলার সীমানা যেভাবে নির্ধারিত হয়েছে তাতে উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ। তবে এ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সব অংশে জনবসতি নেই। এর মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল। সুন্দরবনের মধ্যে যে পরিমাণ ভূমি তার পরমাণ ১৪৪৫.১৮ বর্গ কিলোমিটার। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে তাকালে এ জেলার পূর্বে খুলনা জেলা, পশ্চিমে চব্বিশ পরগণা জেলার (ভারত) বসিরহাট মহকুমা, উত্তরে যশোর জেলা ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
অর্থনীতি :
সাতক্ষীরার দক্ষিনাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ মৎসচাষের উপর নির্ভরশীল। প্রধান ফল আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেপে, নারিকেল, লিচু, সফেদা, জামরুল, কদবেল, বরই এবং পেয়ারা। খামারের মধ্যে ৮৬ টি গবাদিপশু, ৩২২ টি পোল্ট্রি খামার, ৩০৪৬ টি মৎস(রুই,কাৎলা,মৃগেল,পাংগাস ইত্যাদি), ৩৬৫০ টি চিংড়ি খামার, ৬৬ টি হ্যাচারি এবং ১ টি গরু প্রজনন কেন্দ্র আছে। রপ্তানী পণ্য গুলোর মধ্যে চিংড়ি, ধান, পাট, গম, পান পাতা এবং চামড়া উল্লেখযোগ্য।
চিত্তাকর্ষক স্থান :
সুন্দরবন;
মান্দারবাড়ী সমুদ্র সৈকত - শ্যামনগর;
জমিদার বাড়ি ও যশোরেশ্বরী মন্দির - শ্যামনগর;
নলতা রওজা শরীফ - কালিগঞ্জ;
নীলকুঠি - দেবহাটা থানা;
মাইচম্পার দরগা;
লাপসা - সাতক্ষীরা;
বৌদ্ধ মঠ - কলারোয়া;
তেঁতুলিয়া মসজিদ - তালা;
মোজাফফর গার্ডেন;
বনলতা বাগান ও মিনি পিকনিক স্পট - কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা;
আব্বাস গার্ডেন।
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :
খানবাহাদুর আহছানউল্লা - সমাজ সেবক, সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংস্কারক;
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী - বিশিষ্ট সাহিত্যিক;
সিকান্দার আবু জাফর - বিশিষ্ট সাহিত্যিক;
ডা: এম আর খান - জাতীয় অধ্যাপক, বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ;
ডা: এ এফ এম রুহুল হক - সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী;
এ্যাডভোকেট এম মনসুর আলী - সাবেক মন্ত্রী, সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ;
সৈয়দ দিদার বখত - সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সাংবাদিক;
আনিস সিদ্দিকী - বিশিষ্ট সাহিত্যিক (একুশে পদকপ্রাপ্ত);
সৈয়দ জাহাঙ্গীর - বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী (একুশে পদকপ্রাপ্ত);
জনাব তোয়াব খান - সাংবাদিক;
জনাব আবেদ খান - সাংবাদিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব;
রানী সরকার - বিশিষ্ট চলচিত্র অভিনেত্রী;
সাবিনা ইয়াসমিন - প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী;
নীলুফার ইয়াসমিন - বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী;
তারিক আনাম খান - নাট্যশিল্পী;
আফজাল হোসেন - নাট্যশিল্পী;
ফাল্গুণী হামিদ - নাট্যশিল্পী;
মুস্তাফিজুর রহমান - ক্রিকেটার;
সৌম্য সরকার -ক্রিকেটার
0 Comments