পাবনা জেলা

Pabna District of rajshahi Division in Bangladesh
পাবনা জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।

নামকরণের ইতিহাস :

১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে পাবনা স্বীকৃতি লাভ করে। ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেলার বেশির ভাগ অংশ রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখনকার দিনে এসব এলাকায় সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কর্মচারীদের খুব অভাব ছিল। পুলিশের অযোগ্যতা এবং জমিদারদের পক্ষ থেকে ডাকাতি ঘটনার তথ্য গোপন রাখা বা এড়িয়ে যাওয়া হতো। গ্রামাঞ্চলে ডাকাতেরা দলে দলে ঘুরে বেড়াত। চলনবিল এলাকায় জলদস্যুদের উপদ্রব চলছিল দীর্ঘ দিন ধরে। এদের প্রতিরোধ করতে ও শাসনতান্ত্রিক সুবন্দোবস্তের জন্যে কোম্পানি সরকারের মন্তব্য অনুসারে পাবনায় সামগ্রিক ভাবে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে তা স্থায়ী রূপ লাভ করে এবং তাকে স্বতন্ত্র ডিপুটি কালেক্টর রুপে নিয়োগ করা হয়। রাজশাহী জেলার ৫টি থানা ও যশোর জেলার ৩টি থানা নিয়ে সর্ব প্রথম পাবনা জেলা গঠিত হয়। সময় সময় এর এলাকা ও সীমানার পরিবর্তন ঘটেছে। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ নভেম্বর যশোরের খোকসা থানা পাবনা ভুক্ত করা হয়। অন্যান্য থানা গুলোর মধ্যে ছিল রাজশাহীর খেতুপাড়া, মথুরা, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ ও পাবনা। ‘যশোরের চারটি থানা ধরমপুর, মধুপুর, কুস্টিয়া ও পাংশা’। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে সেশন জজের পদ সৃষ্টি হলে এ জেলা রাজশাহীর দায়রা জজের অধীনে যায়। ১৮৪৮ খৃস্টাব্দের ১৭ অক্টোবর জেলার পূর্ব সীমা নির্দিস্ট করা হয় যমুনা নদী। ১২ জানুয়ারি ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জ থানাকে মোমেনশাহী জেলা থেকে কেটে নিয়ে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে মহকুমায় উন্নীত করে পাবনা ভুক্ত করা হয়। নিযুক্ত করা হয় ডিপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। এর ২০ বছর পর রায়গঞ্জ থানা এ জেলায় সামিল হয়। নীল বিদ্রোহ চলাকালে শান্তি শৃংখলার অবনতি হলে লর্ড ক্যানিং ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে জেলায় একজন কালেক্টর নিযুক্ত করেন। এর আগে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে জেলা প্রশাসক হয়ে আসেন টি.ই. রেভেন্স। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জ ও ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে পাবনায় মিউনিসিপ্যালিটি গঠিত হয়। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত হয় জেলা বোর্ড। যখন কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে তখন স্বভাবতই এ জেলা ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী মহারাণী ডিক্টোরিয়ার শাসনাধীনে চলে যায়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে পাংশা, খোকসা ও বালিয়াকান্দি এই তিনটি থানা নিয়ে পাবনার অধীনে কুমারখালী মহকুমা গঠন করা হয়। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে কুষ্টিয়া থানা এ জেলা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে নদীয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে পাংশা থানা ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ মহকুমায় এবং কুমারখালী থানা কুষ্টিয়া মহকুমার সাথে সংযুক্ত করা হয়। এ ভাবে এ জেলার দক্ষিণ সীমানা হয় পদ্মা নদী। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে কুমারখালী থানা সৃষ্টি হলে তা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে পাবনার একটি মহকুমা হয়। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে মহকুমা অবলুপ্ত করে কুষ্টিয়া মহকুমার অংশ করা হয়। ১৮৭৯ তে জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে কয়েকটি থানা বদলে যায়। পাবনা নামের উদ্ভব সম্পর্কে বিশেষ ভাবে কিছু জানা যায় না। তবে বিভিন্ন মতবাদ আছে। প্রত্নতাত্মিক কানিংহাম অনুমান করেন যে, প্রাচীন রাজ্য পুন্ড্র বা পুন্ড্রবর্ধনের নাম থেকে পাবনা নামের উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে। তবে সাধারণ বিশ্বাস পাবনী নামের একটি নদীর মিলিত স্রোত ধারার নামানুসারে এলাকার নাম হয় পাবনা।

ভৌগোলিক সীমানা :

বাংলাদেশে অবস্থিত পাবনা জেলা রাজশাহী বিভাগের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ সৃষ্টি করেছে। এটি ২৩°৪৮′ হতে ২৪°৪৭′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০২′ হতে ৮৯°৫০′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এর উত্তর দিক ঘিরে আছে সিরাজগঞ্জ জেলা আর দক্ষিণে পদ্মা নদী একে ফরিদপুর ও কুষ্টিয়া জেলা হতে পৃথক করেছে। এর পূর্ব প্রান্তদিয়ে যমুনা নদী বয়ে গেছে এবং পশ্চিমে নাটোর জেলা। পাবনার কাজীরহাট নামক স্থানে পদ্মা ও যমুনা নদী পরস্পর মিলিত হয়েছে।

জনসংখ্যা

মোট জনসংখ্যা ২২,৬০,৫৪০ জন । পুরুষ ১১,৫৬,৮০৯, মহিলা ১১,০৩,৭৩১, মুসলিম ৯৫.১২%, হিন্দু ৪.৫০%, খ্রীষ্টান ০.২২%, অন্যান্য ০.১৬%।


প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :

পাবনা জেলা নিম্নলিখিত উপজেলায় বিভক্ত:


  1.  আটঘরিয়া উপজেলা
  2. ঈশ্বরদী উপজেলা
  3. চাটমোহর উপজেলা
  4. পাবনা সদর উপজেলা
  5. ফরিদপুর উপজেলা
  6. বেড়া উপজেলা
  7. ভাঙ্গুরা উপজেলা
  8. সুজানগর উপজেলা
  9. সাঁথিয়া উপজেলা

অর্থনীতি:

প্রধান বৃত্তিসমূহ: কৃষি ৩৪%, কৃষি শ্রমিক ২২.৭৭%, দিন মজুর ৪.৪৬%, পরিবহন ২.১৮%, তাঁতি ২.৮৫%, বাণিজ্য ১৩.২৮%, চাকুরী ৭.২৬% এবং অন্যান্য ১৩.২১%।
ভূমি ব্যাবস্থাপনা: ভূমিহীন ২৯%, ক্ষুদ্র ভূমি মালিক ৪৯%, মধ্যম ভূমি মালিক ১৮% এবং ধনী ভূমি মালিক ৪%।

ভুমি মূল্য প্রথম শ্রেনীর ভূমির বাজার মূল্য ০.০১ হেক্টর প্রতি ৭৫০০ টাকা।
প্রধান কৃষি পণ্য: ধান, পাট, গম, ইক্ষু, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, পান, ডাল।
প্রধান ফল: আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, নারিকেল, পেয়ারা এবং পেঁপে।
মৎস ও গবাদি পশু-পাখি: দুগ্ধ খামার ১০৬৯, মাছের খামার ৮৮, হাঁস-মুরগীর খামার ৭১৪, হ্যাচারী ৩৭।

শিল্প-কারখানা: কাগজ কল, চিনি কল, সুতাকল, পাটকল, তেল, ঔষধ কারখানা, বিস্কুট ফ্যাক্টোরী, চাল ও আটা কল, বরফ কল, ঝালাই, স’মিল, হিমাগার ইত্যাদি।
কুটির শিল্প: সুচিকর্ম, বাঁস ও বেত শিল্প, কামার, কুমার, স্বর্ণকার, দারুশিল্প, দর্জিকাজ ইত্যাদি।

হাট, বাজার ও মেলা: মোট হাট-বাজারের সংখ্যা ১৮২টি এবং মেলা ১৭টি।
প্রধান রপ্তানী পণ্য: ধান, পাট, পান, সুতা, কাপড় ইত্যাদি।

ঐতিহাসিক স্থানসমূহঃ


ঐতিহাসিক তাড়াশ ভবন
লালন শাহ্ সেতু (ঈশ্বরদী),
হার্ডিঞ্জ ব্রীজ (ঈশ্বরদী),
মানসিক হাসপাতাল (হেমায়েতপুর),
জোড় বাংলো (শহর),
আজিম চৌধুরীর জমিদার বাড়ী (দুলাই),
শাহী মসজিদ (ভাড়ারা),
শ্রী শ্রী অনুকৃল চন্দ্র ঠাকুরের আশ্রম (হেমায়েতপুর),
নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস্ (পাকশী),
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র (ঈশ্বরদী),
পাবনা সুগার মিল্স (ঈশ্বরদী),
ঈশ্বরদী বিমান বন্দর,
কৃষি ফার্ম,
নগরবাড়ী/নটাখোলা ঘাট (বেড়া),
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল (শহর/বিসিক শিল্প নগরী),
পাকশী (ঈশ্বরদী),
কাঞ্চন পার্ক (সুজানগর),
খয়রান ব্রীজ (সুজানগর),
প্রশান্তি ভুবন বিনোদন পার্ক (জালালপুর),
দুবলিয়া মেলা (দুর্গা পুজার সময়)
বড়াল ব্রীজ,
দীঘিরপিঠা (ফরিদপুর্),
রাজা রায় বাহাদুরের বাড়ি (ফরিদপুর্),
বেরুয়ান জামে মসজিদ (আটঘরিয়া)

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :

মোহিতমোহন মৈত্র ( - ২৮ মে , ১৯৩৩ ) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।

রাজেন্দ্র লাহিড়ী (২৩ জুন, ১৯০১- ১৭ ডিসেম্বর, ১৯২৭), ব্রিটিশদের ভারত থেকে উৎখাত করার জন্য হিন্দুস্তান রিপাবলিকান এসোসিয়েশনের নানা বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিলেন।