ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা

Brahmanbaria District of Chittagong Division in Bangladesh 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।

নামকরণের ইতিহাস :


১৯৮৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্তরে উন্নীত হয়। তার আগে এটি কুমিল্লা জেলার একটি মহকুমা ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অবদান অনেক। আবদুল কুদ্দুস মাখনের মত ব্যক্তিরা এখানে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেন।

বাংলাদেশের পূর্ব-মধ্য জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেই সাথে চট্টগ্রামের সর্ব উত্তরের জেলা। এক সময় এই জেলা বাংলাদেশের সমতট জনপদের একটি অংশ ছিল। ঈসা খাঁ বাংলায় প্রথম এবং অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন সরাইলে। কুমিল্লার তিনটি সাব-ডিভিশন থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সৃষ্টি হয় ১৮৬০ সালের বৃটিশ আইনে। ১৮৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মুঘল আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মসলিন কাপড় তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল। ১৯২১ সালে সমগ্র মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ শামসুল হুদা (১৮৬২-১৯২২) এবং ব্যারিষ্টার আবদুর রসুল (১৮৭৪-১৯১৭) ছিলেন কংগ্রেস তথা ভারতবর্ষের প্রথম সারির একজন নেতা। উল্লাসকর দত্ত (১৮৮৫-১৯৬৫), সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ, গোপাল দেবের মত অনেক ত্যাগী ও মহান নেতাদের জন্ম দিয়েছে এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়ায় শহীদ হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। লোকমুখে শোনা যায় যে সেন বংশের রাজত্ব্যকালে এই অঞ্চলে অভিজাত ব্রাহ্মণকুলের বড়ই অভাব ছিল। যার ফলে এ অঞ্চলে পূজা অর্চনার জন্য বিঘ্নতর সৃষ্টি হতো। এ সমস্যা নিরসনের জন্য সেন বংশের শেষ রাজা রাজা লক্ষণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এ অঞ্চলে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার শহরের মৌলভী পাড়ায় বাড়ী তৈরী করে। সেই ব্রাহ্মণদের বাড়ির অবস্থানের কারণে এ জেলার নামকরণ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। অন্য একটি মতানুসারে দিল্লী থেকে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ সুফী হযরত কাজী মাহমুদ শাহ এ শহর থেকে উল্লেখিত ব্রাহ্মণ পরিবার সমূহকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন , যা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।

ভৌগোলিক সীমানা :


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আয়তন ১৯২৭.১১ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলার অবস্থান।

জনসংখ্যা

আয়তন: • মোট ১৯২৭.১১ কিমি২ (৭৪৪.০৬ বর্গমাইল) ; জনসংখ্যা : • মোট ১৫,২১,৩৩৬ ;

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ৯টি উপজেলায় বিভক্ত; এগুলো হলোঃ
  • আশুগঞ্জ উপজেলা
  • আখাউড়া উপজেলা
  • কসবা উপজেলা
  • নবীনগর উপজেলা
  • নাসিরনগর উপজেলা
  • বাঞ্ছারামপুর উপজেলা
  • ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা
  • সরাইল উপজেলা
  • বিজয়নগর উপজেলা

অর্থনীতি:


ব্রাহ্মনবাড়িয়ার প্রধান আয়ের উৎস হল তিতাস গ্যাস, যা বাংলাদেশের বড় একটি গ্যাসফিল্ড,দিত্বীয় হল কৃষি, এই জেলায় অনেক জায়গায় বছরে তিন বারও ফসল ফলান এই জেলার কৃষক,তবে বেশি অর্থনৈতিক ভাবে অবধান রাখে প্রবাসি রেমিটেন্স, সৌদি আরব সহ বিশ্বের ভিবিন্ন দেশে অনেক জনশক্তি আছে এই জেলার,আখাওড়া, কষবা, এলাকায় অনেক কৃষক ভিবিন্ন ফলফলাদি যেমন লিচু, পেয়ারা, কাঁঠাল, আখ চাষ করে অনেক অর্থ উপার্জন করে।এই জেলার অন্যতম এক অর্থনিতির চাকা হল, আশুগঞ্জ থানার লালপুর গ্রামে তিতাস নদীর পাড়ে অনেক জেলে মাছ ধরে চ্যাপাশুটকি করে বাংলাদেশের অনেক চাহিদা পুরন করেও বিদেশে রপ্তানি করে থাকে।

ঐতিহাসিক স্থানসমূহঃ


ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহ হল -

  • জামেয়া ইউনূছিয়া (বড় মাদ্রাসা)
  • সরাইল জামে মসজিদ (১৬৬২)
  • কালভৈরব মূর্তি (১৯০০ শতাব্দী, উচ্চতা ২৮ ফুট)
  • ভৈরব রেলওয়ে সেতু
  • বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু
  • কাইতলা জমিদার বাড়ী (নবীনগর)
  • আরিফাইল মসজিদ (সরাইল)
  • কেল্লা শহীদের মাজার (১৮০০ শতাব্দী, খরমপুর)
  • উলচাপাড়া জামে মসজিদ (১৬০০ শতাব্দী)
  • ভাদুঘর শাহী জামে মসজিদ (১৬৬৩ খ্রীষ্টাব্দ)
  • আখাউড়া স্থলবন্দর
  • তিতাস গ্যাসক্ষেত্র
  • হাতিরপুল ও অবদা রেস্ট হাউস (শাহবাজপুর, সরাইল)
  • অদ্বৈত মল্লবর্মনের বাড়ি (গোকর্ণ ঘাট)
  • জিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (আশুগঞ্জ)
  • আর্কাইভ জাদুঘর (কসবা)
  • অবকাশ (সদর)
  • বাসুদেব মূর্তি (সরাইল)
  • হরিপুরের জমিদার বাড়ি
  • কৈলাঘর দূর্গ (কসবা), কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ (কসবা)
  • বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর (আখাউড়া),
  • সৌধ হিরন্ময়
  • শহীদ মিনার
  • তোফায়েল আজম মনুমেন্ট
  • শহীদ স্মৃতিসৌধ
  • মঈনপুর মসজিদ (কসবা)
  • বাঁশী হাতে শিবমূর্তি (নবীনগর)
  • আনন্দময়ী কালীমূর্তি (সরাইল)
  • লোকনাথ দীঘি

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :


ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ (১৮৮১ - ১৯৭২)- খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ, বাবা আলাউদ্দিন খান নামেও তিনি পরিচিত
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬ - ১৯৭১ )- ভাষা সৈনিক , ১৯৪৮ সালের ২৪ শে জানুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিলেন
আনন্দময়ী মা (১৮৯৬-১৯৮২)আধ্যাত্মিক সাধিকা
উল্লাসকর দত্ত (১৮৮৫-১৯৬৫)- ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী , ক্ষুদিরাম বসু এর সহযোগী
শান্তি ঘোষ- ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী;
সুনীতি চৌধুরী- ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী;
গোপাল দেব- ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ বিপ্লবী;
অতীন্দ্রমোহন রায়- ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী
আবদুল কাদির ( ১৯০৬ - ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৪)- বাঙালি কবি, সাহিত্য-সমালোচক ও ছান্দসিক;
শাহজাহান সিদ্দিকী - বীর বিক্রম
মোফাজ্জল হোসেন - বীর প্রতীক
অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১ জানুয়ারি ১৯১৪ - ১৬ এপ্রিল ১৯৫১) :- বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক;
আল মাহমুদ :- আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখক;
আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম - সাবেক সেনাপ্রধান
আনোয়ার হোসেন (বীর উত্তম) - বীর মুক্তিযোদ্ধা
আলী আকবর খান - বিশ্ববিখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী,১৯৭১ এর ১ আগস্ট নিউইর্য়কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর অন্যতম আয়োজক ।
ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁ (১৮৬২ - ১৯৩৩) - গীতিকার,সুরকার,গায়ক ।
নুরুল আমিন (১৮৯৩–১৯৭৪) - পাকিস্তানের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের একমাত্র উপরাষ্ট্রপতি
আকবর আলি খান - অর্থনীতিবিদ,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ।
অলি আহাদ - ভাষা সৈনিক ও স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০৪ প্রাপ্ত
নওয়াব সৈয়দ শামসুল হুদা (১৮৬২-১৯২২) - কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি (১৯১৭ - ১৯২০),বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট (১৯২১),ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য,নিখিল বঙ্গ মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি (১৯০৭) , পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সেক্রেটারি (১৯০৯-১৯১০)
ব্যারিস্টার আবদুর রসুল (১৮৭২ - ১৯১৭)- বাঙালী জাতীয়বাদী নেতা
আবদুল কুদ্দুস মাখন (১৯৪৭-১৯৯৪) - মুক্তিযোদ্ধা,মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক,বঙ্গবন্ধুর 'চার খলিফা'র একজন ।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া - বিখ্যাত পুরাতাত্ত্বিক,গবেষক ।
আব্দুস সাত্তার খান (১৯৪১-২০০৮)- নাসার বিজ্ঞানী, ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের গবেষক ও অধ্যাপক, ১৯৮৬ সালে এফ-১৫ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান এর ইঞ্জিনের জ্বালানি খরচ কমানোয় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ইউনাইটেড টেকনোলজিস স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত, ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির রসায়নবিদ এবং নির্বাচিত ফেলো ।
তাহের খান - যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য গবেষণা ও মাননিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর বিজ্ঞানী, যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার ট্রাস্ককিগি ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ।
সালেহউদ্দিন আহমেদ - বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম গভর্ণর ।