Comilla District of Chittagong Division in Bangladesh

কুমিল্লা জেলা

Comilla District of Chittagong Division in Bangladesh  
কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।

নামকরণের ইতিহাস :


শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য- সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে এ উপমহাদেশে সুপরিচিত। কুমিল্লার খাদি শিল্প, তাঁত শিল্প, কুটির শিল্প, মৃৎ ও কারু শিল্প, রসমালাই, মিষ্টি, ময়নামতির শীতল পাটি ইত্যাদি স্ব-স্ব ঐতিহ্যে স্বকীয়তা আজও বজায় রেখেছে। কালের বিবর্তনের ধারায় এসেছে অনেক কিছু, অনেক কিছু গেছে হারিয়ে, হারায়নি এখানকার মানুষের আন্তরিকতাপূর্ণ আতিথেয়তা ও সামাজিক সম্প্রীতি।

কুমিল্লা একসময় বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল এবং সেই সময় নোয়াখালীও এর অংশ ছিল। ১৭৩৩ সালে বাংলার নবাব শুজাউদ্দিন ত্রিপুরা রাজ্য আক্রমণ করে এর সমতল অংশ সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কুমিল্লা দখল করে। ১৭৮১ সালে নোয়াখালীকে কুমিল্লা থেকে পৃথক করা হয়। ১৭৯০ সালে কোম্পানী শাসনামলে ত্রিপুরা নামের জেলার সৃষ্টি। ১৯৬০ সালে জেলার নাম করা হয় কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলা ২৩°-১’’ থেকে ২৪°-১১’’ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৯০°-৩৪’’ থেকে ৯১°-২২’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বিস্তৃত। কর্কটক্রান্তি রেখা কুমিল্লা জেলা অতিক্রম করেছে। এই জেলার কিছু অংশ গঠিত হয়েছে প্লাবন ভূমি দ্বারা এবং কিছু অংশ পাহাড়ি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। বাকিটা মূলত সমতলভূমি। বর্তমান কুমিল্লা জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনস্থ একটি জেলা। শুরুর দিকে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত হলেও পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল। কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযাগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শন‍াদি থেকে জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল। ১৭৬৫ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে আসার পূর্বে মধ্যবর্তী সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হয়েছে কুমিল্লা। ১৭৬৯ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। তখন ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিলো কুমিল্লা । কুমিল্লাকে ১৭৭৬ সালে কালেক্টরের অধীনস্থ করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়ে ১৯৬০ সালে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা এবং তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদটির নামকরণ জেলা প্রশাসক করা হয় । ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দু'টি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়।

ভৌগোলিক সীমানা :


ভৌগেলিকভাবে এই জেলাটি ২৩°১” উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৪°১১” উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৪” পূর্ব দ্রাঘিমাংশ হতে ৯১°২২” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দক্ষিণে নোয়াখালী ও ফেনী, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা এবং পশ্চিমে মুন্সীগঞ্জ , চাঁদপুর জেলা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা। এই জেলাটির আয়তনঃ ৩০৮৭.৩৩ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের সাথে এই জেলার ১০৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

জনসংখ্যা:

আয়তন • মোট ৩০৮৭.৩৩ কিমি২ (১১৯২.০২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (2011) • মোট ৫৬,০২,৬২৫

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :


কুমিল্লা জেলায় ১টি সিটি কর্পোরেশন ও ১৪ টি উপজেলা রয়েছে।[১] সেগুলো হলঃ
  • বরুরা
  • চান্দিনা
  • দাউদকান্দি
  • লাকসাম
  • ব্রাহ্মণপাড়া
  • বুড়িচং
  • চৌদ্দগ্রাম
  • দেবীদ্বার
  • হোমনা
  • মুরাদনগর
  • লাঙ্গলকোট
  • মেঘনা
  • তিতাস
  • মনোহরগঞ্জ

অর্থনীতি


কুমিল্লা'র অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এই জেলার অর্থনীতি ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের খাদি কাপড়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কুমিল্লার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য, কুমিল্লায় গড়ে উঠেছে " কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল" । এটি পুরাতন এয়ারপোর্ট এলাকায় অবস্থিত প্রায় ২৫৮ একর আয়তনের ১ টি প্রকল্প। কুমিল্লার প্রায় ১১.৬% মানুষ ব্যবসার সাথে জড়িত । এখানে বৃহৎ শিল্পের মধ্যে, বস্ত্রকলঃ ০৭ টি, পাটকলঃ ০৪ টি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্টীলঃ ৪৯৯টি। এখানে ২টি শিল্প নগরী রয়েছে। কুমিল্লায় রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিঃ এর মূল স্থাপনা এবং গ্যাস ফিল্ড। এখানে মোট ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রয়েছে ১২৫৭০ টি।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :


বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি,
শালবন বিহার,
আনন্দ বিহার,
ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও যাদুঘর,
ময়নামতি ওয়ার সেমেট্রি
বোটানিক্যাল গার্ডেন,
ব্লু ওয়াটার পার্ক
চিড়িয়াখানা,
কুমিল্লা পৌর উদ্যান,
শাহ সুজা মসজিদ,
ধর্মসাগর দীঘি,
রূপসাগর দীঘি,
বলেশ্বর দীঘি,
রূপবানমুড়া,
চন্ডীমুড়া,
লালমাই বৌদ্ধ বিহার,
লালমাই পাহাড়,
ময়নামতি পাহাড়

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :


    • আখতার হামিদ খান -প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি
    • ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষাসৈনিক ও সাবেক গণপরিষদ সদস্য
    • আলহাজ্ব আবুল হাসেম -একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষানুরাগী, সাবেক গণপরিষদ সদস্য।
    • ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া -রাজনীতিবিদ।
    • ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত -প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকাইল কলেজ।
    • ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ-সাবেক আইনমন্ত্রী
    • আব্দুল মতিন খসরু -সাবেক আইনমন্ত্রী
    • আহমদ রফিক -ভাষাবিদ
    • মুজিবুল হক মুজিব -রেলমন্ত্রী
    • শচীন দেব বর্মণ -বিখ্যাত গীতিকার ও সুরকার
    • রাহুল দেব বর্মণ
    • মেজর আব্দুল গণি বীর প্রতীক -প্রতিষ্ঠাতা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
    • আলী আশরাফ
    • গোলাম কিবরিয়া মিয়া
    • সুবিদ আলী ভূঞা -রাজনীতিবিদ।
    • রাজা রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়
    • মোহাম্মদ রেদোয়ান
    • প্রাণগোপাল দত্ত -চিকিৎসক
    • আলম অারা মিনু -কন্ঠশিল্পী
    • আজিজুল হাকিম -অভিনেতা
    • রাবেয়া চৌধুরী
    • এনামুল হক মনি -আইসিসি আম্পায়ার
    • আ হ ম মোস্তফা কামাল লোটাস - রাজনীতিবিদ ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব;

যাতায়াত ব্যবস্থা:


মহাসড়কঃ ১৩২.০০ কি:মি:, রেলপথঃ ২১২.০০ কি:মি:, ফেরীঘাট ৩৪ টি, নদীবন্দর ০১ টি। কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন ও লাকসাম জংশন রেলওয়ে স্টেশন এই জেলার দুটি প্রধান যাত্রাবিরতি রেলওয়ে স্টেশন; তা ছাড়াও আরো অনেক স্টেশন রয়েছে।

নদ-নদী:


এখানকার প্রধান নদ-নদীগুলো হলোঃ মেঘনা, গোমতী নদী, তিতাস নদী, ডাকাতিয়া নদী, কাঁকড়ী নদী।

Post a Comment

0 Comments