হবিগঞ্জ জেলা
হবিগঞ্জ জেলা : হবিগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ১৯৮৪ সালে হবিগঞ্জকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। এর আগে ১৮৭৪ সাল থেকে হবিগঞ্জ মহকুমা সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নামকরণের ইতিহাস :
চাকলাপুঞ্জী
প্রাগৈতিহাসিক প্রতিবেদনসমূহ হতে জানা যায় বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার সাথে লালমাই পাহাড় এবং সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং মধুপুরের উচ্চতর এলাকাসমূহের সাথে যুক্ত ছিল। চাকলাপুঞ্জী চা বাগানের কাছে চান্দির মাজার নামক এলাকায় বালু নদী নামে পরিচিত একটি নদী পাড়ে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক সরঞ্জাম যেমন জীবাশ্ম কাঠ, হস্তনির্মিত যুদ্ধাস্ত্র ইত্যাদি দৃষ্টে এখানে প্রাচিন মানবের বসবাস ছিল প্রমানিত হয়। মুগলদের সাথে বারো ভূইয়াদের যুদ্ধ ১৫ শতকে সিলেটের জমিদার আনোয়ার খান এবং বানিয়াচংয়ের জমিদার হোসেন খান (বারো ভূইয়াদের দলভূক্ত) এর সাথে যুদ্ধ হয় মুঘল সেনাবাহিনীর, যা বাহরাস্থান-ই-গায়েবী গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়।
পুটিজুরী দুর্গ
খাজা ওসমান (আফগান রাজা) বাকাই নগর দুর্গ ছেড়ে এসে গিরিপালের কাছে পুটিজুরী নামক আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি গড়ে তোলেন একটি দুর্গ। যে প্রতিরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাজা ওসমানের ভাই দুর্গ ত্যাগ করলে মুগল সেনারা সে সুযোগ গ্রহণ করে খাজা ওসমানের সেনাদলকে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার দালাম্বপুর নামক স্থানে পরাজিত করে।
তেলিয়াপাড়ার যুদ্ধ
৪ এপ্রিল, ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা তেলিয়াপাড়ায় ২য় ইষ্ট বেঙ্গলের সদরদপ্তরে সমবেত হন। চা বাগান পরিবেষ্টিত পাহাড়ী এ অঞ্চলে জেনারেল এম এ জি ওসমানী, লে: কর্ণেল আব্দুর রব , লে: কর্ণেল সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কাজী নুরুজ্জামান , মেজর খালেদ মোশাররফ , মেজর নুরুল ইসলাম , মেজর শাফায়াত জামিল , মেজর মইনুল হোসাইন চৌধুরী সহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন সেদিন। সেদিনের সভায় চারজন সিনিয়র অফিসারকে যুদ্ধকালীন কর্মক্ষেত্র ভাগ করে দেয়া হয়; সিলেট-বাহ্মণবাড়ীয়া এলাকায় মেজর শফিউল্লা , কুমিল্লা-নোয়াখালী এলাকায় মেজর খালেদ মোশাররফ, চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় মেজর জিয়াউর রহমান এবং কুষ্টিয়া-যশোর এলাকায় মেজর আবু ওসমান চৌধুরী কে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই সভাতেই মুক্তিবাহিনী সাংগঠনিক ভাবে পরিপুষ্ট হয়ে উঠে এবং জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্ব গ্রহণ করা হয়।
ভৌগোলিক সীমানা :
হবিগঞ্জ জেলা ২৩˚৫৭” হতে ২৪˚৪২” উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১˚১০” হতে ৯১˚৪০” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এবং আয়তনে ২,৬৩৬.৫৮ বর্গ কিলোমিটার।হবিগঞ্জ জেলার উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা , দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য , পূর্বে মৌলভীবাজার জেলা এবং পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা ।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :
- হবিগঞ্জ জেলায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ৮টি উপজেলা, ৬টি মিউনিসিপ্যালিটি, ৩৬টি ওয়ার্ড, ১২৪টি মহল্লা, ৭৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ১২৪১টি মৌজা এবং ২০৯৩টি গ্রাম।
- আজমিরিগঞ্জ
- চুনারুঘাট
- নবীগঞ্জ
- বানিয়াচং
- বাহুবল
- মাধবপুর
- লাখাই
- হবিগঞ্জ সদর
ঐতিহাসিক স্থানসমূহঃ
- সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ;
- বিতঙ্গল আখড়া - বৈষ্ণব ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান;
- দ্বীল্লির আখড়া - বৈষ্ণব ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান;
- শ্রীবাড়ি চা বাগান;
- রেমাকালেঙ্গা বন্যপ্রানী অভয়ারন্য - চুনারুঘাট;
- তেলিয়াপারা চা বাগান - মাধবপুর;
- বিবিয়ানা গ্যাস - নবীগঞ্জ
- শংকরপাশা শাহী মসজিদ
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :
- হযরত সৈয়দ নাসিরুদ্দীন সিপাহসালার রঃ প্রাচীণ হবিগঞ্জ তথা তরফ রাজ্য বিজেতা অলী এ কামেল।
- সৈয়দ সুলতান (১৫৫০-১৬৪৮) - মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি;
- শেখ ভানু (১৮৮৯-১৯১৯) - প্রখ্যাত সাধক;
- বৃন্দাবন চন্দ্র দাশ (১৮৫০-১৯৩২) - প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক;
- বিপিন চন্দ্র পাল (১৮৫৮-১৯৩২) - ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব;
- সৈয়দ আলী আগফর
- জগৎজ্যোতি দাস (১৯৪৯-১৯৭১) - বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের দাস বাহিনীর প্রধান;
- শাহ এ এম এস কিবরিয়া - অর্থনীতিবিদ ও কূটনীতিক;
- এম মোখলেসুর রহমান চৌধুরী - রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী;
- সিরাজুল হোসেন খান - রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য;
- শাহ এ এম এস কিবরিয়া - সাবেক অর্থমন্ত্রী, সাবেক পররাস্ট্র সচিব এবং এসকাপের সাবেক নির্বাহী সচিব;
- দেওয়ান ফরিদ গাজী - মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও রাজনীতিবিদ;
- মোহাম্মদ আবদুর রব - মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড, বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান ;
- মেজর জেনারেল (অবঃ) সি আর দত্ত - মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেক্টর কমান্ডার;
- সিরাজুল হোসেন খান - রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য;
- এনামুল হক মোস্তফা শহীদ - মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য। [৩]
- রামনাথ বিশ্বাস - ভূপর্যটক
- সৈয়দ এ. বি. মাহমুদ হোসেন - সাবেক
- প্রধান বিচারপতি ;
- সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন - সাবেক প্রধান বিচারপতি;
- ফজলে হাসান আবেদ - ব্র্যাক -এর প্রতিষ্ঠাতা;
- দেওয়ান শেগুফ্তা বখ্ত চৌধুরী সাবেক গভর্ণর বাংলাদেশ ব্যাংক।
- সৈয়দ মোস্তফা কামাল গবেষক,লেখক,সাবেক ডি ডি ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
- আবদুল মান্নান চৌধুরী - সাবেক সংসদ সদস্য, ইংল্যান্ডে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক;
- মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন - বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর;
- নাজমুল হোসেন (জন্মঃ ১৯৮৭) - জাতীয় দলের ক্রিকেটার।
0 Comments