মুন্সিগঞ্জ জেলা
মুন্সিগঞ্জ জেলা : মুন্সিগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। মুন্সিগঞ্জ ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। মুন্সিগঞ্জের প্রাচীন নাম বিক্রমপুর।
নামকরণের ইতিহাস :
প্রাচীনকালে নিঃসন্দেহে মুন্সিগঞ্জ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল। অঞ্চলটি খ্রিস্টীয় দশ শতকের শুরু থেকে তেরো শতকের প্রথম পর্যন্ত চন্দ্র, বর্মন ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল। মুন্সিগঞ্জ উল্লেখ ‘স খলু শ্রী বিক্রমপুর সমাবাসিত শ্রীমজ্জয়স্কন্ধবারাত’ (বিজয় অথবা রাজধানীর রাজকীয় স্থান যা মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত)-রূপে শ্রীচন্দ্রের তাম্রশাসনে সর্বপ্রথম দেখা যায় এবং পরবর্তী বর্মন ও সেন রাজবংশের শাসনামলে ম এ মর্যাদা অব্যাহত ছিল। এমনকি সেনদের শাসনামলে, যাঁরা বলতে গেলে প্রায় সমগ্র বঙ্গের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন, মুন্সিগঞ্জ তাঁদের রাজধানী রূপে বলবৎ ছিল এবং নদীয়ায় মুসলমান আক্রমণকারী বখতিয়ার খলজীর হাতে পরাজিত হওয়ার পর লক্ষ্মণসেন এ অঞ্চলে এসেছিলেন। তাঁর দুই পুত্র বিশ্বরূপসেন ও কেশবসেন স্বল্পকালের জন্য এ অঞ্চল শাসন করেছিলেন। বিশ্বরূপসেন ও কেশবসেনের তাম্রশাসনগুলিতে রাজধানী রূপে মুন্সিগঞ্জের উল্লেখ না থাকলেও তাঁরা যে ভূমি দান করেছিলেন তার অবস্থান ছিল মুন্সিগঞ্জ ভাগে। এতে এ অঞ্চলের ওপর তাঁদের কর্তৃত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মুন্সিগঞ্জের খ্যাতি ১২৮০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিক পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। এসময় দনুজমাধব দশরথদেব কিংবা জিয়াউদ্দীন বরনীর দনুজ রায় সুবর্ণ গ্রামের (সোনারগাঁও) সন্নিকটে তাঁর রাজধানী স্থানান্তর করেন। তখন থেকে সমগ্র সুলতানি আমলে এ অঞ্চলটি বিস্মৃতির পাতায় থেকে যায়। এরপর মুগল যুগে রাজস্ব তালিকায় শুধু পরগনা হিসেবে এর নামের উল্লেখ পুনরায় দেখা যায়। মুগল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের জমিদার চাঁদ রায় ও কেদার রায়এর (বাংলার বারো ভূঁইয়াদের উল্লেখযোগ্য দুজন) বীরোচিত প্রতিরোধ মুন্সিগঞ্জকে কিছুটা স্বল্পস্থায়ী গৌরব প্রদান করে।
ভৌগোলিক সীমানা :
মুন্সিগঞ্জ জেলার উত্তরে ঢাকা জেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর জেলা, পূর্বে মেঘনা নদী ও কুমিল্লা জেলা এবং পশ্চিমে পদ্মা নদী ও ফরিদপুর জেলা অবস্থিত।আয়তন: ৯৫৪.৯৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৩´ থেকে ২৩°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১০´ থেকে ৯০°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।
জনসংখ্যা
মুন্সিগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা ১২৯৩৯৭২ জন। পুরুষ ৬৫৫৫৮৫ জন,মহিলা ৬৩৮৩৮৭ জন। মুসলিম ১১৮১০১২ জন, হিন্দু ১১০৮০৪ জন , বৌদ্ধ ১৯২২ জন , খ্রিস্টান ১০৩ জন এবং অন্যান্য ৩০৮ জন।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :
মুন্সিগঞ্জ জেলায় ছয়টি উপজেলা রয়েছে। এগুলি হল,
- শ্রীনগর উপজেলা
- গজারিয়া উপজেলা
- লৌহজং উপজেলা
- টঙ্গীবাড়ী উপজেলা
- মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা
- সিরাজদীখান উপজেলা
অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান, রাজা শ্রীনাথের বাড়ি, রামপালে বাবা আদমের মসজিদ, হাসারার দরগা, সোনারং জোড়া মন্দির, পদ্মার চর, ইদ্রাকপুর কেল্লা, রাজা বল্লাল সেন ও হরিশচন্দ্রের দীঘি, শ্যামসিদ্ধির মঠ, শুলপুরের গির্জা, মেঘনা ভিলেজ টুরিস্ট গার্ডেন।
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :
- অতীশ দীপঙ্কর, বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক।
- অনিল মুখার্জি, লেখক, রাজনীতিবিদ।
- বিনয় বসু, (সেপ্টেম্বর ১১, ১৯০৮ - ডিসেম্বর ১৩, ১৯৩০), ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনেরএকজন অন্যতম বাঙালি ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
- দীনেশ গুপ্ত (৬ ডিসেম্বর, ১৯১১ - ৭ জুলাই, ১৯৩১) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন স্বনামধন্য বাঙালি বিপ্লবী।
- ইমদাদুল হক মিলন, লেখক।
- চাষী নজরুল ইসলাম, চলচ্চিত্র পরিচালক।
- জগদীশ চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী।
- ব্রজেন দাস, ইংলিশ চ্যানেল জয়ী সাঁতারু।
- হুমায়ুন আজাদ, ভাষাবিদ, লেখক।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখক।
- চিত্তরঞ্জন দাস, রাজনীতিবিদ।
- গওহর জামিল, নৃত্যশিল্পী।
- আব্দুল জব্বার খান (চলচ্চিত্র পরিচালক), অভিনেতা।
- স্যার চন্দ্রমাধব ঘোষ, আইনবিদ।
- অধ্যাপক রাজকুমার ঘোষ, গণিতশাস্ত্রবিদ ।
- ক্ষিতি মোহন সেন
- সত্যেন সেন, রাজনীতিবিদ,সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক।
- রণেশ দাশগুপ্ত, সাহিত্যিক।
- সূর্য কুমার বসু, পূর্ববঙ্গে সর্বপ্রথম বস্ত্রকল নির্মাতা।
- মুহাম্মদ আব্দুল হাকিম বিক্রমপুরী, বিশিষ্ট সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ।
- সোমেশ চন্দ্র বসু, গণিতশাস্ত্রবিদ।
- বুদ্ধদেব বসু, কবি।
- সমরেশ বসু, ঔপন্যাসিক।
- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, ঔপন্যাসিক।
- ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌতুকশিল্পী।
- মেঘনাদ সাহা, পদার্থ ও গণিত শাস্ত্রবিদ।
- রায় বাহাদুর শ্রীনাথ রায়, দানবীর।
- সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, রাজনীতিবিদ।
- সৈয়দ আব্দুল মান্নান , বিশিষ্ট সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ ।
- একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সরকার
- ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ , সাবেক রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সরকার
- হাসান ফকরী কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক।
- ফখরুদ্দীন আহমদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান,সাবেক গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক
- সাদেক হোসেন খোকা রাজনীতিবিদ,সাবেক মন্ত্রি‚সাবেক মেয়র ঢাকা সিটি কর্পোরেশন
- এম.এ. জলিল অনন্ত অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, ব্যবসায়ী
0 Comments