রাজবাড়ী জেলা
রাজবাড়ী জেলা : রাজবাড়ী জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।
নামকরণের ইতিহাস :
এল.এন. মিশ্র উক্ত পুস্তকে উল্লেখ করেন যে, রাজা সংগ্রাম শাহের রাজদরবার বা রাজকাচারী ও প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী অফিস বর্তমান রাজবাড়ী এলাকাকে কাগজে কলমে রাজবাড়ী লিখতেন (লোকমুখে প্রচলিত)। ঐ পুস্তকের শেষের পাতায় রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে রাজবাড়ী নামটি লিখিত পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, রাজবাড়ী রেল স্টেশনটি ১৮৯০ সালে স্থাপিত হয়। ঐতিহাসিক আনন্দনাথ রায় ফরিদপুরের ইতিহাস পুস্তকে বানিবহের বর্ণনায় লিখেছেন - নাওয়ারা চৌধুরীগণ পাঁচথুপি থেকে প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে বানিবহে এসে বসবাস শুরু করেন। বানিবহ তখন ছিল জনাকীর্ণ স্থান। বিদ্যাবাগিশ পাড়া, আচার্য পাড়া, ভট্টাচার্য পাড়া, শেনহাটিপাড়া, বসুপাড়া, বেনেপাড়া, নুনেপাড়া নিয়ে ছিল বানিবহ এলাকা। নাওয়ারা চৌধুরীগণের বাড়ি স্বদেশীগণের নিকট রাজবাড়ী নামে অভিহিত ছিল। মতান্তরে রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ হয়। রাজা সূর্য কুমারের পিতামহ প্রভুরাম নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজকর্মচারী থাকাকালীন কোন কারণে ইংরেজদের বিরাগভাজন হলে পলাশীর যুদ্ধের পর লক্ষীকোলে এসে আত্মগোপন করেন। পরে তাঁর পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এ অঞ্চলে জমিদারী গড়ে তোলেন। তাঁরই পুত্র রাজা সুর্য কুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন। রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ করা হয় ১৮৯০ সালে। বিভিন্ন তথ্য হতে জানা যায় যে, রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে করার দাবি তোলা হলে বানিবহের জমিদারগণ প্রবল আপত্তি তোলেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে যে স্থানটিতে রাজবাড়ী রেল স্টেশন অবস্থিত উক্ত জমির মালিকানা ছিল বানিবহের জমিদারগণের। তাঁদের প্রতিবাদের কারণেই স্টেশনের নাম রাজবাড়ীই থেকে যায়। এ সকল বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা হয় যে, রাজবাড়ী নামটি বহু পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল। এলাকার নাওয়ারা প্রধান, জমিদার, প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিগণ রাজা বলে অভিহিত হতেন। তবে রাজা সূর্য কুমার ও তাঁর পূর্ব পুরুষগণের লক্ষীকোলের বাড়ীটি লোকমুখে রাজার বাড়ি বলে সমধিক পরিচিত ছিল। এভাবেই আজকের রাজবাড়ী।
ভৌগোলিক সীমানা :
রাজবাড়ী জেলার উত্তরে পদ্মা নদী, পশ্চিম থেকে পূর্বে পদ্মা ও যমুনার সঙ্গমস্থল দৌলতদিয়ার সামান্য উত্তরে আরিচা ঘাট। পদ্মার অপর পারে পাবনা ও মানিকগঞ্জ। দক্ষিণে পদ্মার শাখা নদী গড়াই নদী, গড়াই-এর ওপারে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলা। পূর্বে ফরিদপুর ও পশ্চিমে কুষ্টিয়া।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহঃ
রাজবাড়ী জেলায় সর্বমোট ৪২টি ইউনিয়ন ও ৫টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছেঃ
- রাজবাড়ী সদর উপজেলা
- গোয়ালন্দ উপজেলা
- পাংশা উপজেলা
- বালিয়াকান্দি উপজেলা
- কালুখালী উপজেলা
অর্থনীতিঃ
রাজবাড়ি জেলার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর।জেলাটিতে ধান,পাট,গম,ইক্ষু,পিঁয়াজ,তামাক এবং ডাল জাতীয় কৃষিজাত পণ্য উৎপাদিত হয়।জেলাটি শিল্পে সমৃদ্ধ না হলেও অর্থনীতিতে অবদান রয়েছে।
নদীসমূহ:
রাজবাড়ীকে ঘিরে পদ্মা, চন্দনা, গড়াই নদী ও হড়াই নদী ।
ঐতিহাসিক স্থানসমূহঃ
1.রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন - ১৮৭৮ সালে বাণিবহের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও তার ভাই অভয় শংকর মজুমদার প্রতিষ্ঠা করেন; যা ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর এই স্থাপনাকে সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে;[৩] শাহ পাহলোয়ানের মাজার;
2.দাদ্শী মাজার শরীফ - রাজবাড়ী শহর থেকে ১ কিঃমিঃ পূর্বে;
3.জামাই পাগলের মাজার - রাজবাড়ী শহরের ৬ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে আহলাদিপুর মোড়;
4.নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির - বালিয়াকান্দি থানার নলিয়া গ্রাম;
5.সমাধিনগর মঠ - বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়ন;
6.রথখোলা সানমঞ্চ - বেলগাছি;
7. নীলকুঠি;
8. মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র - পদমদী;
9. দৌলতদিয়া ঘাট;
10.চাঁদ সওদাগরের ঢিবি;
11.কল্যাণদিঘি;
12. গোয়ালন্দ ঘাট।
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :
- কাজী মোতাহার হোসেন
- মীর মোশাররফ হোসেন
- রোজিনা (অভিনেত্রী)
- মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী
0 Comments