ময়মনসিংহ জেলা

Mymensingh District of Mymensingh Division in Bangladesh

ময়মনসিংহ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ময়মনসিংহ জেলা মৈমনসিংহ গীতিকা , মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ানা মদীনা, চন্দ্রাবতী , কবিকঙ্ক, দীনেশচন্দ্র সেনের জন্য বিখ্যাত।

নামকরণের ইতিহাস :

মোগল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ'র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে। বিশ টিন কেরোসিন বুক করা হয়েছিল বর্জনলাল এন্ড কোম্পানীর পক্ষ থেকে নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এই মাল চলে যায় রাজপুতনার নাসিরাবাদ রেল স্টেশনে। এ নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরবর্তীতে আরো কিছু বিভ্রান্তি ঘটায় রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়। সেই থেকে নাসিরাবাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ময়মনসিংহ বাংলাদেশের একটি পুরোনো জেলা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭ সালের ১ মে তারিখে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এখনকার বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠিতে জেলার কাজ শুরু হয় তবে পরবর্তী সময়ে সেহড়া মৌজায় ১৭৯১ সালে তা স্থানান্তরিত হয়। আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থান একে একে সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে। ১৮৪৫ সালে জামালপুর, ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল ও ১৮৮২ সালে নেত্রকোনা মহকুমা গঠন করা হয়। পরে সবকটি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। ময়মনসিংহ শহর হয় ১৮১১ সালে। শহরের জন্য জায়গা দেন মুক্তাগাছার জমিদার রঘুনন্দন আচার্য। ১৮৮৪ সালে রাস্তায় প্রথম কেরোসিনের বাতি জ্বালানো হয়। ১৮৮৬ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ ও ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :

ময়মনসিংহ জেলা ১৩টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত; এগুলো হলঃ
  • ঈশ্বরগঞ্জ
  • গফরগাঁও
  • গৌরীপুর
  • তারাকান্দা
  • ত্রিশাল
  • ধোবাউড়া
  • নান্দাইল
  • ফুলপুর
  • ফুলবাড়িয়া
  • ভালুকা
  • ময়মনসিংহ সদর
  • মুক্তাগাছা
  • হালুয়াঘাট

ভৌগোলিক সীমানা :


ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা , পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা অবস্থিত।

চিত্তাকর্ষক স্থান :


  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
  • আলেকজান্ডার ক্যাসেল
  • জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা
  • সার্কিট হাউজ
  • সিলভার প্যালেস
  • বিপিন পার্ক
  • রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি
  • বোটানিক্যাল গার্ডেন
  • ময়মনসিংহ টাউনহল
  • দুর্গাবাড়ী
  • ব্রহ্মপুত্র নদ
  • গৌরীপুর রাজবাড়ী
  • মুক্তাগাছা রাজবাড়ী
  • কেল্লা তাজপুর
  • শশী লজ
  • ময়মনসিংহ জাদুঘর
 চিত্তাকর্ষক স্থান :

হেমেন্দ্রমোহন বসু ( ১৮৬৬ - ২৮ আগস্ট 
১৯১৬ ) - প্রখ্যাত বাঙালি ব্যবসায়ী;
হেমেন্দ্রকিশোর আচার্য চৌধুরী ( ২৮ মে ১৮৮১ - জুন ১৯৩৮ ) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
মুজিবুর রহমান খান ফুলপুরী ( ১৮৮৯ - ৫ জানুয়ারি ১৯৬৯ ) - সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী;
চন্দ্রকুমার দে ( ১৮৮৯ - ১৯৪৬ ) - লেখক এবং ময়মনসিংহে প্রচলিত লোকগীতির সুবিখ্যাত সংগ্রাহক;
আনন্দকিশোর মজুমদার (১৮৯২ - ১৯৪০ ) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ (২২ এপ্রিল ১৮৯৩ - ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ ) - ভারতীয় উপমহাদেশের
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
শ্রী নরেন্দ্রচন্দ্র ধর (১৮৯৬ - ১৯৭৮) - পণ্ডিত সন্ন্যাসী;
আবুল কালাম শামসুদ্দীন (৩ নভেম্বর ১৮৯৭ - ১৯৭৮) - সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং ভাষাবিদ;
শ্রী নরেন্দ্রচন্দ্র ধর (১৮৯৬ - ১৯৭৮) - পণ্ডিত সন্ন্যাসী;
আবুল মনসুর আহমেদ (১৮৯৮ - ১৮ মার্চ ১৯৭৯) - সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক;
নরেশ রায় (? - ২২ এপ্রিল ১৯৩০ ) - ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব এবং
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনে জড়িত বিপ্লবী;
হরুবালা রায় ( ? - ৪ মে ১৯৪৪ ) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
মতিলাল পুরকায়স্থ (বিশ শতক) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী এবং রাজনীতিবিদ;
ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায় (বিশ শতক) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
প্রতুল ভট্টাচার্য (১৬ জানুয়ারি ১৯০০ - ২৯ আগস্ট ১৯৭৮) - ভারতীয় উপমহাদেশের
ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
হরসুন্দর চক্রবর্তী (১৯০৫ - ২১ মে ১৯৭৩) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
বিনোদচন্দ্র চক্রবর্তী (১৯০৯ - ২৫ এপ্রিল ১৯৭৩) - ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী;
জয়নুল আবেদীন (২৯ ডিসেম্বর ১৯১৪ - ২৮ মে ১৯৭৬) - বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী;
আফম আহসানউদ্দিন চৌধুরী (১৯১৫ - ৩০ আগস্ট ২০০১) - বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি;
আবদুল জব্বার (১৯১৯ - ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) - ভাষা আন্দোলনের অন্যতম বীর শহীদ;
কানাইলাল নিয়োগী (১৯২৪ - ১৯ মে ১৯৬১) - ১৯৬১ সালে ভারতের বরাক উপত্যাকায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিত্ব;
বিলায়েত খাঁ (৮ই আগস্ট, ১৯২৮ - ১৩ই মার্চ, ২০০৪) বিখ্যাত বাঙালি

সেতারবাদক:

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (জন্মঃ ২ নভেম্বর ১৯৩৫ ) - প্রখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক;
রফিক উদ্দীন ভূূঁইয়া (১৯২৮ সালের ২৫ জানুয়ারি-১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ) - প্রখ্যাত ভাষা সৈনিক, রাজনীতিবিদ, ময়মনসিংহ জেলার সাবেক গভর্নর, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি;
শামীম আজাদ (জন্মঃ ১১ নভেম্বর ১৯৫২) - ব্রিটেন-প্রবাসী বাংলাদেশী কবি ও সাহিত্যিক;
তসলিমা নাসরিন (জন্মঃ ২৫ আগস্ট ১৯৬২) - বাংলাদেশের একজন সাহিত্যিক ও চিকিৎসক;
মিতালী মুখার্জী একজন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ( জন্ম : ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ ) - বাংলাদেশী ক্রিকেটার

নদ-নদী :

ময়মনসিংহ জেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী , কাঁচামাটিয়া নদী, মঘা নদী, সোয়াই নদী, বানার নদী, বাইলান নদী, দইনা নদী, পাগারিয়া নদী , সুতিয়া নদী , কাওরাইদ নদী , সুরিয়া নদী, মগড়া নদী , বাথাইল নদী, নরসুন্দা নদী, নিতাই নদী , কংস নদী , খাড়িয়া নদী], দেয়ার নদী, ভোগাই নদী , বান্দসা নদী, মালিঝি নদী, ধলাই নদী , কাকুড়িয়া নদী, দেওর নদী, বাজান নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলা নদী, মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী, খিরু নদী, বাজুয়া নদী, লালতি নদী, চোরখাই নদী, বাড়েরা নদী, হিংরাজানি নদী, আয়মন নদী, দেওরা নদী, থাডোকুড়া নদী, মেদুয়ারি নদী, জলগভা নদী, মাহারী নদী।