অবস্থান: আলীশাহপুর, ফতেপুর, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
|
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউয়িনের ২নং ওয়ার্ডের আলীশাহপুর গ্রামে প্রায় ৫’শত বছরের পুরনো একটি প্রাচীন মসজিদ কালের সাক্ষী হিসাবে আজোও দাঁড়িয়ে আছে। কিন্ত এ ঐতিহাসিক মসজিদটির কথা নাচোলের অধিকাংশ মানুষই জানেনা। সরকারী বা বেসরকারীভাবে এ মসজিদটি এ ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির তথ্য উৎঘাটন বা সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মসজিদটি নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট। মসজিদের দেওয়ালের প্রস্থ ৩ ফুট। দেওয়াল অক্ষুন্ন রাখার বেস্টনীসহ এর প্রশস্থতা ৪২ ইঞ্চি। মসজিদের চার কোনায় রয়েছে ৪টি বুরুজ। গম্বুজের চুড়ায় একটি মিনার আছে। উত্তর দক্ষিনে ২টি খিলান জানালা রয়েছে। দেওয়ালের চার কোনায় চারটি নাম রয়েছে। পশ্চিম দেওয়ালের ভিতরাংশের মধ্য স্থানে রয়েছে একটি ছোট খিলান মেহরাব। পূর্ব দেওয়ালের মধ্যে রয়েছে একটি খিলান দরজা। এ দরজার দু’ পাশে রয়েছে ইস্টক অলংকরনে সজ্জিত দুটি দরজা। কাছে থেকে দেখে মনে হবে দরজা দুটি কাঠের এবং নানা নকশা অলংকরনে সজ্জিত যা সম্প্রতি বন্ধ করা হয়েছে বলে মনে হবে। কিন্ত প্রকৃত পক্ষে দরজার যাবতীয় অলংকরন ই্টের এবং স্থায়ীভাবে বন্ধ। মসজিদটি গৌড়িয়া ইট দ্বারা নির্মিত। মসজিদের ভিত্তি, দেওয়াল ও গম্বুজটি খিলানের উপরে স্থাপিত। ভিতর ও গম্বুজে বিচিত্র নকশা রয়েছে। মসজিদের বহিরাংশের দেওয়াল গাত্রে বিচিত্র মেরলন নকশা বিদ্যমান। মসজিদের চার কর্নারে চারটি বুরুজের উপর রয়েছে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট চারটি মিনার। কোন শিলালিপির চিহ্ন নেই। মসজিদের উত্তর পশ্চিম কর্নারে রয়েছে একটি পুকুর। এটি মুসল্লীরা ওজু ও গোসলের কাজে ব্যবহার করতো কিন্ত নতুনভাবে সম্প্রসারন করায় মসজিদটির প্রকৃত অবয়ব পুরা অংশ ঢাকা পড়েছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটি কখন কার আমলে বা কে নির্মান করেছিল তার নির্দিষ্ট মসজিদটিতে ওই সময়ের স্থাপত্য শিল্পের নির্দশনাবলী বিদ্যমান এবং তার নামানুসারে এ গ্রামের নামকরন করা হয় আলীশাহপুর। এ কারনে তারা মনে করেন এ মসজিদটি প্রায় ৫’শত বছর আগে নির্মিত । আবার কেউ কেউ মনে করেন ৬/৭ শত বছর আগে এ এলাকায় আলীশাহ নামক ধর্মপরায়ন এক ব্যক্তি ধর্ম প্রচারের জন্য এসে এই গ্রামে এ মসজিদটি নির্মান করেন। আর এ কারনেই তার নামানুসারেই গ্রামের নাম রাখা হয়। এ মসজিদের সঠিক ইতিহাস না পাওয়া গেলেও মসজিদের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে সবাই মনে করেন এটি ৫ থেকে ৬’শ বছরের পুরনো । মসজিদ’টির দু’দাগে ৩৬ শতক জমি হযরত আলী শাহ’র নামে আরএস রেকর্ডে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ তথ্য হতে অনুমান করা যায় যে, হযরত আলীশাহ নামক কোন এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এটি নির্মান করেন এবং তার নামানুসারে মসজিদ ও গ্রামটির নামকরন করা হয়। এলাকাবাসীরা আরো জানান, স্বাধীনতার আগে মসজিদটির আসে-পাশে বনজঙ্গলে ভরা ছিল। তখন এটিকে কেউ মসজিদ হিসাবে ব্যবহার করতো না। স্বাধীনতার পর নিকটবর্তী ফুরশেদ গ্রামের রসুল মিয়া (৭৫) নামক এক ব্যক্তি মসজিদটির সংস্কার করে তার ছেলেদের নিয়ে সর্বপ্রথম জু’মার নামাজ আদায় করেন। পরে মসজিদটি স্থায়ীভবে আরো সংস্কার ও সম্প্রসারন করা হয়। বর্তমানে ওই গ্রামের জামে মসজিদ হিসাবে সেটি ব্যবহৃত হচ্ছে। মসজিদ’টির আধা কিলোমটিার দক্ষিণ পূর্বে পীর পুকুর নামে একটি উঁচু ঢিবি ও পুকুরের অস্থিত্ব বিদ্যমান। ছোট এ ঢিবিটির উপর ও আশে-পাশে প্রচুর টুকরো টুকরো পাথর ও ইটের ভগ্নাংশ দেখতে পাওয়া যায়। স্থানটি প্রায় দেখতে জঙ্গালাকীর্ন। স্থানীয় লোকেরা স্থানটিকে পবিত্র স্থান তথ এলি উউলিয়ার মাজার বলে মনে করেন। এর প্রকৃত ইতিহাস এখনো রহস্যাবৃত ও তমাশাচ্ছন্ন। এলাকার নামকরন ও নানা আলামত থেকে শুধু অনুমান করা যায় যে, স্থানটি হয়তোবা আলীশাহ নামক কোন দ্বীণই বুজুর্গ ব্যক্তির মাজার হতে পারে। কলের বিবর্তনে অনেক ইতিহাস হারিয়ে গেছে। বহু প্রাসাদতুল্য ইমারত ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কিন্ত পবিত্র স্থানগুলি আজো কালের সাক্ষি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। যাহোক ব্যাপক গবেষনা, পর্যবেক্ষন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলে এর ইতিহাস একদিকে যেমন বেরিয়ে আসবে। অন্যদিকে এ মসজিদটি নাচোল উপজেলার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পুরনো দিনের মুসলিম সভ্যতার পরিচায়ক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করবে। তাই মসজিদটি সংস্কার ও সংরক্ষণ অত্যান্ত জরুরী বলে প্রত্নতাত্বিক বিভাগের দৃস্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার অভিজ্ঞ মহল।
কিভাবে যাওয়া যায়: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউয়িনের ২নং ওয়ার্ডের আলীশাহপুর গ্রামে এর অবস্হান। নাচোল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। মোটর সাইকেল/নসিমন/মিশুকে করে যাওয়া যায়।
0 Comments