লক্ষ্মীপুর জেলা
লক্ষ্মীপুর জেলা : লক্ষ্মীপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল,এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতির দিক থেকে, বিখ্যাত একটি শহর। এর আয়তন সমূহ বাংলাদেশে লক্ষ্মীপুরের . অবস্থান, পশ্চিমে ভোলা উত্তরে চাঁদপুর পূর্বে নোয়াখালী দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
নামকরণের ইতিহাস :
ত্রয়োদশ শতাব্দিতে লক্ষ্মীপুর ভুলনা রাজ্যের অধীন ছিল। মুঘল ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে লক্ষ্মীপুরে একটি সামরিক স্থাপনা ছিল। ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত এ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে লবন উৎপন্ন হত এবং বাইরে রপ্তানি হত। লবনের কারনে এখানে লবন বিপ্লব ঘটে। স্বদেশী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরবাসী স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করে। এ সময় মহাত্মা গান্ধি এ অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তখন প্রায়ই কাফিলাতলি আখড়া ও রামগঞ্জের শ্রীরামপুর রাজবাড়ীতে অবস্থান করতেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৬ সালের জুন মাসে লক্ষ্মীপুর সফরে আসেন। ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এখানে পাক-হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সতের বার যুদ্ধ হয়। এখানে তিনটি স্মৃতি স্তম্ভ, দুইটি গণকবর ও একটি গণহত্যা কেন্দ্র পাওয়া যায়।
লক্ষ্মীপুর নামকরণ হয়েছে তা নিয়ে কয়েকটি মতপ্রচলিত রয়েছে। লক্ষ্মী, ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী (দূর্গা কন্যা ও বিষ্ণু পত্মী) এবং পুর হলো শহর বা নগর। এ হিসাবে লক্ষ্মীপুর এর সাধারণ অর্থ দাঁড়ায় সম্পদ সমৃদ্ধ শহর বা সৌভাগ্যের নগরী। ঐতিহাসিক কৈলাশ চন্দ্র সিংহ ‘রাজমালা’ বা ‘ত্রিপুরা’র ইতিহাস লিখতে গিয়ে তৎকালীন নোয়াখালীর পরগণা ও মহালগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন। এতে দেখা যায়, বাঞ্চানগর ও সমসেরাবাদ মৌজার পশ্চিমে ‘লক্ষ্মীপুর’ নামে একটি মৌজা ছিল। আজকের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর মৌজাই তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজা। আবার অন্যমতে, সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজা আরাকান পলায়নের সময় ১৬২০ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে ঢাক ত্যাগ করেন। তিনি ধাপা ও শ্রীপুর হয়ে ৯ মে ‘লক্ষ্মীদাহ পরগনা’ ত্যাগ করে ভূলুয়া দূর্গের ৮ মাইলের মধ্যে আসেন। ১২ মে ভূলুয়া দূর্গ জয় করতে না পেরে আরাকান চলে যান। সেই লক্ষ্মীদাহ পরগনা থেকে লক্ষ্মীপুর নামকরণ করা হয়েছে বলে কেউ কেউ ধারণ করেন। লক্ষ্মীপুর শহরের পূর্ব পাশে শাহ সুজার নামানুসারে একটি সড়কের নামকরণ করা হয় ‘সুজা বাদশা সড়ক’।
সুজা বাদশা সড়ক’ নামে একটি ইতিহাস গ্রন্থও রচনা করেছেন। ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে মগ ও ফিরিংগীদের মিলিত বাহিনী ভূলুয়া, ভবানীগঞ্জ ও ইসলামাবাদ আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। স্যার যদুনাথ সরকার এ সংক্রান্ত বর্ণনায় লিখেছেন, ইসলামাবাদ চাটগাঁ শহর নয়। ভূলুয়ার পশ্চিমে একটি দূর্গ সমৃদ্ধ শহর। ঐতিহাসিক ড. বোরাহ ইসলামাবাদকে লক্ষ্মীপুর বলে ধারণা করেছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, তৎকালীন লক্ষ্মীপুর মৌজার অংশ মেঘনা পাড়ের দুর্গ সমৃদ্ধ কামানখোলাই ইসলামাবাদ নামের মগ ও ফিরিংগীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল। শ্রী সুরেশ চন্দ্রনাথ মুজমদার ‘রাজপুরুষ যোগীবংশ’ নামক গবেষনামূলক গ্রন্থে লিখেছেন দালাল বাজারের জমিদার রাজা গৌর কিশোর রায় চৌধুরী ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী থেকে রাজা উপাধি পেয়েছেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা ১৬২৯-১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দালাল বাজার আসেন। তাঁর বংশের প্রথম পুরুষের নাম লক্ষ্মী নারায়ন রায় (বৈষ্ণব) এবং রাজা গৌর কিশোরের স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী প্রিয়া। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, লক্ষ্মী নারায়ন রায় বা লক্ষ্মী প্রিয়ার নাম অনুসারে লক্ষ্মীপুরের নামকরণ করা হয়।
ভৌগোলিক সীমানা :
এর মোট আয়তন ১৪৫৫.৯৬ বর্গ কিমি। এটির উত্তরে চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে ভোলা ও নোয়াখালি জেলা, পূর্বে নোয়াখালি জেলা এবং পশ্চিমে বরিশাল ও ভোলা জেলা এবং মেঘনা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশনে লক্ষ্মীপুর জেলা ২২০৩০’হতে ২৩০১০’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০০৩৮’ হতে ৯০০০১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এখানকার প্রধান নদীগুলো হলো - মেঘনা নদী, ডাকাতিয়া নদী, কাটা খালি নদী, রহমত খালি নদী ও ভুলুয়া।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহ :
লক্ষ্মীপুর শহর রহমতখালি নদীর তীরে অবস্থিত এবং মোট ১২ টি ওয়ার্ড ও ২২ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত। ১৯৭৬ সালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে লক্ষ্মীপুর একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ জেলার অধীনে ৫ টি উপজেলা, ৩ টি পৌরসভা, ৫৫টি মহল্লা, ৪৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৪৫টি মৌযা এবং ৫৩৬ টি গ্রাম আছে।
লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলা হলোঃ
- কমলনগর
- রামগঞ্জ
- রামগতি
- রায়পুর
- লক্ষ্মীপুর সদর
অর্থনীতি:
শিল্প-কারখানাঃ টেক্সটাইল মিল, ধানের কল, ময়দার কল, বরফের কল, অ্যালুমিনিয়াম কারখানা, বিড়ি কারখানা, মোম কারখানা, সাবানের কারখানা, নারিকেলের তন্তু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ছাপাখানা, তেলের মিল, ব্যাটারি কারখানা, বেকারি।
কুটির শিল্পঃবাঁশ ও বেতের কাজ, কাঠের কাজ, সেলাই, কামার, কুমার, মুচি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মেকানিক ইত্যাদি।
প্রধান রপ্তানি পন্যঃ নারিকেল, মাছ, মরিচ, কাঠবাদাম,সুপারি সয়াবিন ডাল।
ঐতিহাসিক স্থানসমূহঃ
- মেঘনা নদী
- কমলা সুন্দরী দীঘি
- শিশু পার্ক
- জ্বীনের মসজিদ
- দালাল বাজার খোয়াসাগর দিঘী
- শাহাপুর নীল কুঠি
- তিতা খাঁ জামে মসজিদ
- দালাল বাজার জমিদার বাড়ী
- রায়পুর মত্স প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র(এশিয়ায় বৃহত্তম)
- রায়পুর বড় মসজিদ।
- শ্রীগোবিন্দ মহাপ্রভু আখড়া
- দালাল বাজার মঠ
- রামগঞ্জের শ্রীরামপুর রাজবাড়ী
- মজু চৌধুরীর হাট
- নন্দনপুর ঈদগাহ ময়দান
- শাখারীপাড়ায় শ্রী শ্রী রামঠাকুর আশ্রম
- কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধ
- মতির হাট
প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব :
- হাফেজ্জী হুজুর -রাজনীতিবিদ ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব
- এ. এস. এম. আবদুর রব - রাজনীতিবিদ
- মোহাম্মদউল্লাহ - বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি
- মোহাম্মদ তোয়াহা-ভাষা সৈনিক
- সেলিনা হোসেন - কথা সাহিত্যিক
- ডঃ মফিজুল্লাহ্ কবীর - ইতিহাসবিদ
- রোজী আফসারী - অভিনেত্রী
- রামেন্দু মজুমদার - অভিনেতা
- মাহফুজ আহমেদ-অভিনেতা
- আবুল আহসান(সাবেক সার্ক মহাসচিব)
- সানাউল্লাহ নূরী-প্রখ্যাত সাংবাদিক
- নিশাত মজুমদার (প্রথম বাংলাদেশী নারী এভারেষ্ট বিজয়ী)
0 Comments